Sunday, February 24, 2013

কৃষি জমিতে তামাক চাষ বন্ধে আইন হোক

দেশে খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে, এই বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করবে না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। কিন্ত চিন্তা আর কাজের পার্থক্যের ব্যাপকতার  বিষয়টি এক্ষেত্রেও বিদ্যমান। আর তাই দিন দিন কমে আসছে আমাদের কৃষি জমি যা দেশের খাদ্য সংকটকে প্রকট করবে। শিল্পায়ন, বাসস্থান তৈরি, নদীভাঙনের পাশাপাশি তামাক চাষের মতো ক্ষতিকর পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি দেশের কৃষি জমিকে ধ্বংস করছে। দেশের অনেক অঞ্চল যেসব জমিতে খাদ্য উৎপাদন হতো, তা এখন দখল করে নিয়েছে তামাক চাষ।

বাংলাদেশে আবাদী জমির পরিমান খুবই সীমিত। তথাপি সড়ক নির্মাণ, শিল্পস্থাপন, ঘরবাড়ি নির্মাণ, নদী ভাঙনসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবছর দেশে কৃষি জমি ১ শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৭১ সালে আবাদী জমির পরিমাণ ২ কোটি ১৭ হেক্টর ছিল । ১৯৮৬ সালে কমে দাঁড়ায় ৮১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর এবং ২০০৩ সালে কমে দাঁড়ায় ৭০ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরে। আর এ অবস্থার মধ্যে বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে তামাক চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণের দুর্বল নীতি বা অবস্থান দেশের কৃষি জমি ধ্বংস, খাদ্য সংকট, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সমস্যার মতো বিষয়গুলোকে প্রকট করে তুলবে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ এ তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়ন এবং চাষীদের বিকল্প ফসল উৎপাদনে আর্থিক সহযোগিতার বিধান ছিল। ২০১০ সালে বিকল্প ফসল উৎপাদনে ঋণ সহায়তা দেয়ার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু বিগত সময়ে এই নীতি ও বিধান বাস্তবায়নে কোনো ধরনের উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। ধূমপান ও তামাকের নেশা থেকে নিজেদের সন্তান আর পরিবারকে রক্ষা করার ইচ্ছে আমাদের সকলেরই আছে। অথচ তামাক চাষ, উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের কোনো নীতি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েই যাচ্ছে।

ভয়েজ অব ডিসকভারি সংক্রান্ত এক রিট মামলার রায়ে হাইকোর্ট তামাক নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে বান্দরবান জেলা জজ কোর্টের একটি রায়ে ওই এলাকায় তামাক চাষ ১০০০ একরের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন। আদালতের এই সিদ্ধান্ত বিশ্বে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত। যদিও ওই দুটি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়।

তামাক কোম্পানিগুলোর প্ররোচনায় তামাক চাষ আগ্রাসীভাবে বিভিন্ন খাদ্য ভাণ্ডারের জমি দখল করে নিচ্ছে। উবিনীগের তথ্যানুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক হচ্ছে। বিগত ২ বছরে তামাক চাষ প্রায় ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভাণ্ডার বলে পরিচিত চলনবিল এখন দখল করে নিচ্ছে তামাক চাষ। পাবর্ত্য এলাকায় এ বিষের ছোয়া রন্ধ্র্রে রন্ধ্রে।  তামাক চাষ শুধুমাত্র খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয় এই বিষবৃক্ষ চাষ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিপণন সব ক্ষেত্রে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

গ্রামীণ কৃষক সমাজের দরিদ্রতাকে পুঁজি করে তামাক চাষ ভয়াবহভাবে বিস্তার লাভ করেছে। তামাক চাষ লাভজনক এ ধরনের ভ্রান্ত বাহারী বিজ্ঞাপন তামাক চাষে ধাবিত করার চক্রান্তের আড়ালে তামাক চাষের সমস্যাগুলো হারিয়ে যায়। প্রতিবছর তামাক কোম্পানির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তামাক চাষ করতে হয়। তামাক যদি লাভজনক হয় তবে চাষী কেন প্রতিবছর ঋণ নেবেন? এই প্রশ্নটি কেউই করে না। একজন চাষীর জন্য জমি মূল্যবান সম্পদ। কিন্ত প্রতিবছর প্রচুর রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহারে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে জমির উর্বরতা।  রাসায়নিক ও কীটনাশকের প্রভাবে জনস্বাস্থ্য, বনভূমি, পানি, জলজ প্রাণী, পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সম্প্রতি সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সংশোধিত আইনে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের বিষয়ে আরো কঠোর বিধান করা হয়েছে। এ আইনে খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধান বিধানযুক্ত হবে, এ আমাদের প্রত্যাশা।


লেখক: সৈয়দ সাইফুল আলম, পরিবেশ আন্দোলন কর্মী
shovan1209@gmail.com
http://www.banglamail24.com/index.php?ref=ZGV0YWlscy0yMDEzXzAyXzI0LTc0LTI0OTIw