Monday, April 6, 2015

“স্বাস্থ্য রক্ষায় তামাকের বিপণন নিয়ন্ত্রণে লাইসেন্স এর প্রয়োজনীয়তা”

“স্বাস্থ্য রক্ষায় তামাকের বিপণন নিয়ন্ত্রণে লাইসেন্স এর প্রয়োজনীয়তা”


শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধ।

৭ এপ্রিল ২০১৫, ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন অডিটরিয়াম
আয়োজনেঃ-ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, 

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। প্রতিবছর ৭ এপ্রিল সারা বিশ্বে যথাযথ মর্যাদার সাথে এ দিবসটি পালিত হয়। এদিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । প্রতিবছর সংস্থাটি এমন একটি ইস্যু বেছে নেয় যা বিশেষ করে সারা পৃথিবীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে
Ò Safe food, Healthy life বাংলায় “নিরাপদ পুষ্টিকর খাবার, সুস্থ্য জীবনের অঙ্গিকার”

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজকের এই দিনে একটি বিশেষ বিষয়কে সেমিনারের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য রক্ষায় নিরাপদ খাদ্য যেমন জরুরি, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্যগুলো বর্জন করাও প্রয়োজন। অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমন- কোমলপানীয়, ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড এবং তামাকজাত দ্রব্য বর্তমান বিশ্বে অসংক্রামক রোগ যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস সৃষ্টির অন্যতম কারণ। আর এ রোগগুলো হতে রক্ষায় আমাদের অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও তামাকজাত দ্রব্য বর্জন এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহনের অভ্যাস করতে হবে।
তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যূর অন্যতম প্রধান কারণ। তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে প্রতিবছর ৫৭,০০০ হাজার মানুষ মারা যায় এবং ৩,৮২,০০০ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। সরকারের চিকিৎসাখাতে ব্যয় করতে হয় ১১,০০০ কোটি টাকা। এই বিশাল মানব সম্পদ ও আর্থিক তিকে কোনভাবেই অবহেলা করা সম্ভব নয়। নানা দোহাই দিয়ে কোম্পানিগুলো লাভের পাহাড় গড়লেও মানুষের ভাগ্যে আসছে রোগ ও মৃত্যু । দরিদ্র মানুষদের বিনোদনের নামে এমন কোন সুযোগ দেওয়া বিবেকবান মানুষের কর্তব্য নয়, যা তাদের রোগ ও মৃত্যুর কারণ। আমরা এমন অবস্থা চাই না, যাতে মানুষ খাদ্য না কিনে তামাক কিনবে। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে এমন পরিবেশ আমাদের কাম্য যেখানে মানুষ তামাকজাত দ্রব্য, কোমলপানীয়, ফাষ্টফুডসহ অস্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে অধিকহারে শাক-সব্জি, ফলমূল খাবে। মৃত্যু, অপুষ্টি, রোগ ও দরিদ্রতা, থেকে মানুষকে দূরে রাখতে হলে অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং সকল ধরনের তামাক থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে। বিশ্বব্যাপী তামাকের ভয়াবহতার দিকে নজর দিলে দেখা যায়-
    তামাকের কারণে প্রতি ৮ সেকেন্ডে ১ জন করে মানুষ মারা যায়।
     ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর তামাকের কারণে ১ কোটি লোক মারা যাবে।  যার ৭০ লই আমাদের মতো দরিদ্র দেশগুলোতে।
     তামাকের কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে ২ ল হেক্টর বন উজাড় হয়ে  যাচ্ছে।
     পৃথিবীতে প্রতিদিন ৮০ হাজার থেকে ১ ল কিশোর/তরুণ তামাক সেবন শুরু করে।
     পরো ধূমপানের কারণে বছরে পৃথিবীতে ১ ল ৬ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়

আমাদের আবাদী ভুমির পরিমান সীমিত। তামাকের মতো ক্ষতিকর দ্রব্য চাষের কারণে ধ্বংশ হচ্ছে আমাদের খাদ্যের জমি। তামাক চাষের এলাকায় দেখা দিচ্ছে খাদ্যের ঘাটতি। জমিতে দীর্ঘদিন তামাক চাষের ফলে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। এ অবস্থার উত্তোরণ না হলে অদুর ভবিষৎতে এ সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।  খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সুস্থ্য জীবনের জন্য তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ অত্যান্ত জরুরী।
তামাক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবহার সকল পর্যায়ই জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তামাকের বহুমাত্রিক ক্ষতি, তামাকজনিত কারণে মানুষের মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব রোধে তামাক নিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই। বিশ্বব্যাপী তামাকের ভয়াবহতা লক্ষ্য করে সরকার ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন এবং ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন এর মাধ্যমে শক্তিশালী করেছেন। আইনের কার্যক্রম বেগবানকরণে ২০১৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করেছেন। জনস্বার্থে প্রণীত এ আইনটি বাস্তবায়নে আমাদের সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই নিজ কার্যালয় ধূমপানমুক্তসহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ইতিমধ্যেই আইসিডিসিআরবি এবং ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন অফ দ্যা ইউনাইটেড ন্যাশনস্ এর সহায়তায় পথে খাবার বিক্রয়কারী ২০০ হকারকে লাইসেন্স এর আওতায় এনেছে এবং আরো ১০০ হকারকে লাইসেন্স এর আওতায় আনার পরিকল্পনা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর রয়েছে। এছাড়াও খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে সেনেটারী ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। নিরাপদ খাবার ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে আমাদের প্রত্যাশা:
ক্স    সিগারেটসহ সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা
ক্স    তামাক নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের আলাদা বাজেট বরাদ্দ করা
ক্স    তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে
ক্স    যত্র-তত্র সিগারেট বিক্রয় নিষিদ্ধ
ক্স    খোলা ও খূচরা সিগারেট বিক্রয় নিষিদ্ধ
ক্স    স্কুলের আশেপাশের ২০০ মিটারের মধ্যে সিগারেটসহ সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় বন্ধ
ক্স    আইন অনুসারে সকল প্রতিষ্ঠানে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপন নিশ্চিতকরণ
ক্স    বিক্রয়স্থলে (চড়রহঃ ড়ভ ংধষব) হতে সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন অপসারণ করা
ক্স    একজন মানুষের সুস্থ্য ও কর্মঠ থাকার জন্য অধিকহারে মাঠ, পার্ক এবং হাটাঁর পরিবেশ সৃষ্টি
ক্স    স্বাস্থ্য রক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের ন্যায় অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমন- কোমলপানীয়, ফাস্টফুড, জাঙ্কফুডসহ স্বাস্থ্যহানীকর পন্যের বিজ্ঞাপন বন্ধে উদ্যেগ গ্রহণ করা

তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। বাংলাদেশের এ সকল পদপে আন্তজার্তিকভাবেও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তামাক নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান  সীমাবদ্ধতাগুলো অতিক্রম করা সম্ভব হলে দেশের সম্মান ও ভাবমুর্তি আরো উজ্বল হবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে, আইন বাস্তবায়নে সকলের সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা ছাড়া কোনভাবেই সীমাবদ্ধতাগুলো অতিক্রম করা সম্ভব নয়। আইন ও বিধিমালা প্রণয়নের দাবীতে বিগত দিনে বেসরকারী সংস্থাগুলো যেভাবে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসাবে এগিয়ে এসেছে তা সত্যিই একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আগামী দিনে দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বেগবানকরণের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন সকলের সমন্বিত উদ্যোগ ।

তথ্য সুত্র:
১. Impact of tobacco related illnesses in Bangladesh, World Health Organization. .
২.    তামাক নিয়ন্ত্রন নির্দেশিকা- ডাবিউবিবি ট্রাস্ট
৩.    স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
৪.    তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে করনীয়-ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট



No comments:

Post a Comment