Saturday, August 24, 2013

সিগারেটের প্যাকেটের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী ধূমপান রোধে সহায়ক হবে


সিগারেট-বিড়ির প্যাকেটের মোড়কে কিছুদিনের মধ্যেই আইনের মাধ্যমে ছবি সংবলিত সতর্কবাণী প্রবর্তন হতে যাচ্ছে। সিগারেটের মোড়কে ছবি থাকলে ধূমপান কমাতে সহায়ক হবে। কারণ যারা লিখতে পড়তে পারেন না, তারা ছবি দেখে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকটি উপলব্ধি করতে পারবেন। কারণ কথায় বলে, হাজার শব্দের চেয়ে একটি ছবি অনেক শক্তিশালী। তবে ছবি হতে হবে স্পষ্ট ও স্বচ্ছ। ছবিকে অবশ্যই বক্তব্যধর্মী হতে হবে। বর্তমানে সিগারেট, বিড়ির প্যাকেটের মোড়কে শুধু সতর্কবাণী রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে যখন প্রথম পিকটোরিয়াল ওয়ার্নিংয়ের আইন হলো, তখন দেখা গেল, ছবিগুলো খুবই দুর্বল। তাই বাংলাদেশে তামাকের মোড়কে যে ছবি দেয়া হবে তা যেন স্পষ্ট হয়। ছবিগুলোতে খুব বোল্ডলি (শক্তিশালী) ধূমপানের ক্ষতিকারক ভূমিকার বর্ণনা না থাকলে এ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই ছবিগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।

এ সম্পর্কে বেসরকারি সংগঠন ডাব্লিউবিবির মিডিয়া এডভোকেসি অফিসার সৈয়দ সাইফুল আলম বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র সর্তকবাণী থাকলে সেবনকারীদের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করা সম্ভব। একটি ছবি হাজার শব্দের চেয়ে শক্তিশালী। গবেষণায় দেখা গেছে, তামাজাত দ্রব্যের মোড়কে স্বাস্থ্য ক্ষতির ছবি সেবনকারীকে তামাক ব্যবহার না করতে উদ্বুদ্ধ করে। তাছাড়া আমাদের দেশের নিরক্ষর মানুষ বেশি ধূমপান করে। তারা পড়তে জানে না। ছবি থাকলে তারা তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারবে।

বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতি বছর ৬০ লাখ মানুষ তামাকজনিত কারণে মারা যাচ্ছে, যার মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে মারা যায় ৬ লাখ ধূমপায়ী। এখনই তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে ২০৩০ সাল নাগাদ এ মৃত্যুর সংখ্যা ৮০ লাখে দাঁড়াবে।

কানাডা, ব্রাজিল, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড সিগারেটের প্যাকেটে ১০০% সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ বাণীর ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশে সিগারেটের প্যাকেটে ও বিজ্ঞাপনে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরÑ এ সর্তকবাণী প্রদান করা হয়। এ সর্তকবাণী মানুষের কোনো কাজে আসে না। কারণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ ধূমপায়ী তামাকের কারণে কোন কোন রোগ হয় তা জানে না। তাই প্যাকেটে কোন কোন রোগ হয় তাও লেখা দরকার। এমনকি তামাকজাত সামগ্রীর গায়ে কি ধরনের রোগের ছবি ও লেখা যাবে তা আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। তামাকজাত সামগ্রীর গায়ের সতর্কবাণী থেকে তামাকজনিত রোগ সম্পর্কে যাতে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সিগারেটের প্যাকেটসহ অন্যান্য তামাকজাত সামগ্রীর প্যাকেট/কৌটার ৫০ ভাগ স্থানজুড়ে ছবিসহ সতর্কীকরণ বাণী প্রদানের ব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে। এতে একদিকে ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগে উৎসাহিত এবং অধূমপায়ীদের ধূমপানে নিরুৎসাহিত করা সম্ভব হবে।

তামাকজাত সামগ্রীর এসব সতর্কবাণী যাতে সময়ানুযায়ী পরিবর্তন করা যায় সে ব্যবস্থাও করতে হবে। অর্থাৎ বার্ষিক তামাকজাত সামগ্রী উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে সতর্কবাণী পরিবর্তনের ব্যবস্থা করা। তামাকজাত সামগ্রীর গায়ে স্বাস্থ্যবাণী প্রদানের ও পরিবর্তনের ক্ষমতা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রদান করতে হবে। প্যাকেটের গায়ে ‘লাইট’, ‘মাইল্ড’, ‘লো-টার’, ‘রেগুলার’ জাতীয় বিভ্রান্তিকর শব্দ নিষিদ্ধ করতে হবে।

বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো আমাদের দেশে যে ধরনের সিগারেটের প্যাকেট ব্যবহার করতে পারে, তা পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে ব্যবহার করতে পারে না। একই ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্যাকেটে অনেক উন্নত দেশে ছবিসহ সতর্কবাণী প্রদান করতে হয়। উন্নত দেশ অপেক্ষা আমাদের শিক্ষার হার কম থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে তাদের স্বাস্থ্য সতর্কবাণী খুবই দুর্বলভাবে উপস্থাপন করে।

আমাদের দেশের লোকজনের জন্য দেশের উপযোগী স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ব্যবহার করা উচিত। তবে এ দায়িত্ব অবশ্যই তামাক কোম্পানিকে প্রদান করা যাবে না। আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ ধরনের সতর্কবাণী একটি কার্যকর উপায়। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে কিংবা করতে যাচ্ছে।

http://www.alokitobangladesh.com/development-possibility/2013/08/25/18349/print

No comments:

Post a Comment